বিকেলের আলোয় সবুজ ধানের মাঠ আর মাঝে মাঝে একপায়ে দাঁড়িয়ে খেজুর গাছের সারি। দূর আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। আকাশটাও ভীষণ নীল। চলছে মেঘ-রোদ্দুরের খেলা। বাইরে সীমাহীন সবুজের বুকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। কিছুক্ষণ আগে যে পরিবেশ ছিল, এখন আর তা নেই। নেই সাদা মেঘ কিংবা পড়ন্ত বিকেলের রক্তিম আলো। আপনি জানালা দিয়ে প্রকৃতির এই অপার্থিব সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। ডালপালার ঝাপটা আর দিগন্তবিস্তৃত সবুজ মাঠকে পেছনে ফেলে তীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন গন্তব্যের দিকে।
সন্ধ্য ঘনিয়ে এলো প্রায়। গোধূলির হালকা আলোয় সবুজ ধানের মাঠের ওপারে গাছপালা, ঘরবাড়িগুলো এখনও আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। ঘরে ফিরছে ক্লান্ত কৃষাণ, গায়ে কাদামাটি মাখা দস্যি ছেলেরা, শ্রান্ত জেলেরা, ছাগলের দড়ি হাতে নিয়ে ঘরে ফিরছে দুই বেণীওয়ালা গ্রাম্য কিশোরীও, নীড়ে ফিরছে পাখিরা। এমনকি সারাদিনের পাট চুকিয়ে ঘরে ফিরছে সূর্যমামাও। গতিদানব ছুটে চলছে শতাব্দী ধরে, আবহমান বাংলার বুক চিরে।
উপরের পঙক্তিমালা কাল্পনিক কিছু নয়, বরং অনেকের ক্ষেত্রে রেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটা ঠিক এমনই। ট্রেনে চড়ে প্রকৃতির যে সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়, ধুলাবালি আর ইট-পাথুরে সড়কে তা সম্ভব নয়। রেলের চাকার ঘূর্ণনের ফলে ঘুরেছে সভ্যতার চাকা। সভ্যতার বিকাশ ঘটাতে রেলের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলার সভ্যতা, সংস্কৃতি, সমাজ এবং রাষ্ট্রের উপর রেল যে প্রভাব ফেলেছে, তা অন্য কিছুর ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
রেল এলো ঢাকায়
মুঘল শাসনামল থেকেই ঢাকা ছিল পূর্ব বাংলার সবচেয়ে বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর। ১৬১০ সালে সুবা বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সেসময় থেকেই ঢাকা বাংলার প্রধান ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। ঢাকার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্রিটিশ শাসনামলেও অব্যাহত থাকে। তাই শুরুতেই ব্রিটিশ সরকার কলকাতার সাথে ঢাকার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে চেয়েছিল।
ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ঢাকাতেই। ১৮৫২ সালে ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তা কর্নেল জন পিট কেনেডি তার সামরিক এবং ব্যবসায়িক সুবিধা বিবেচনায় ব্রিটিশ সরকারের কাছে কলকাতা থেকে সুন্দরবন হয়ে ঢাকা পর্যন্ত রেলপথ বসানোর প্রস্তাব দেন। তার এ প্রস্তাব ব্রিটিশ সরকার বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই গ্রহণ করে। কিন্তু এরই মধ্যে ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশ সরকার মায়ানমার (তৎকালীন বার্মা) দখল করে নেয়। ব্রিটিশ সরকার চেয়েছিল, মায়ানমারকে ভারতীয় উপনিবেশের সাথে সংযুক্ত করতে। রাজনৈতিক এবং কৌশলগত সুবিধার কারণে মায়ানমারের রাজধানী রেঙ্গুন থেকে কলকাতা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের প্রশ্ন তখন প্রকট হয়ে ওঠে। চাপা পড়ে যায় কর্নেল কেনেডির প্রস্তাব।
১৮৭১ সালে কলকাতা থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ প্রতিস্থাপিত হয়। সেসময় ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের অধীনে গোয়ালন্দ থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত স্টিমার চলাচল করত। এক টিকিটেই ভ্রমণ করা যেত কলকাতা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত।
ঢাকা-কলকাতার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হওয়ায় গোয়ালন্দ বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠে। সেসময় স্টিমার কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতা করে বিভিন্ন উৎসবের সময় রেল কোম্পানিগুলো স্বল্পমূল্যে ভাড়া নির্ধারণ করত। এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল ১৯২৭ সালের ১ অক্টোবর। পূজা উপলক্ষে গোয়ালন্দ থেকে কলকাতা পর্যন্ত একটি তৃতীয় শ্রেণীর ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। ২০৬ কিলোমিটার রাস্তায় নামমাত্র মাথাপিছু ৪ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। 'পূর্ববাংলার রেলওয়ের ইতিহাস ১৮৬২-১৯৪৭' গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী, ঐ বিশেষ ট্রেনটি মাত্র চারটি স্টেশনে থামার ব্যবস্থা করা হয়।
ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে ট্রেনের যাত্রীদের জন্য কলকাতা পর্যন্ত তীর্থযাত্রীদের যাতায়াত ভাড়া, প্রধান দর্শনীয় স্থানের জন্য গেটের ভাড়া, কালীঘাটের জন্য পূজার ফি, রেলওয়ে নির্মিত নিজস্ব সিনেমা হলের একটি টিকিট ছাড়াও তিনবেলা বিনামূল্যে খাওয়ার ব্যবস্থা করে। ট্রেনটিতে মোট ৬৩৯ জন যাত্রী ভ্রমণ করেছিল। এর মধ্যে ৬১৯ জন যাত্রী এর আগে কখনো কলকাতায় যায়নি এবং ১৩০ জনের সেটিই ছিল প্রথম রেলযাত্রা। পরবর্তী বছরগুলোতেও পূজা উপলক্ষে সেই বিশেষ ট্রেন অব্যাহত ছিল। প্রায় এক শতাব্দী পর চার টাকার টিকেট, তৃতীয় শ্রেণীর ট্রেন আর তিন বেলা বিনামূল্যে খাবার আজ শুধুই স্মৃতি।
নারায়ণগঞ্জ-ময়মনসিংহ-বাহাদুরাবাদ সেকশন
ঐতিহাসিকভাবেই ময়মনসিংহ অঞ্চল পাট চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু পাটের ব্যাপক উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও এ অঞ্চলে না ছিল কোনো পাটকল, আর না ছিল পাট রপ্তানির জন্য ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই ব্রিটিশ সরকার সর্বপ্রথম কলকাতার সাথে ঢাকা ও ময়মনসিংহের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করতে চাইল যাতে করে উক্ত অঞ্চলের উৎপাদিত কাঁচা পাট কলকাতার পাটকল পর্যন্ত পৌঁছানো যায়। তারপর সেখান থেকে প্রস্তুতকৃত পাটজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতেও সুবিধা হবে। এমন পরিকল্পনা থেকেই ঢাকা, ময়মনসিংহে রেলপথ নির্মাণের জন্য রেল কোম্পানিগুলোকে তাগাদা দিতে থাকে ব্রিটিশ সরকার।
ঢাকায় রেলপথ নির্মাণের জন্যে প্রাদেশিক সরকারের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় 'ঢাকা স্টেট রেলওয়ে কোম্পানি'। ১৮৭৭ সালে কোম্পানিটি ঢাকায় রেলপথ নিয়ে আসার জন্য পুরোদমে কাজ শুরু করে দেয়। ঢাকা এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় জরিপ কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৭৮ সালে। জরিপের নাম ছিল ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলওয়ে সার্ভে ১৮৭৮’। নির্বাহী প্রকৌশলী ডব্লিউ ডব্লিউ ওয়ার্ডেনের নেতৃত্বে জরিপ কার্যক্রমের গুরুভার গ্রহণ করে 'মের্সাস মোলওয়র্থ অ্যান্ড ইংলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার্স'।
জরিপ কার্যক্রম শেষ হলে ঢাকায় রেলপথ নিয়ে আসার জন্য তিনটি লাইন নিয়ে বিবেচনা করা হয়; শীতলক্ষ্যার পাড় থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, পদ্মার পূর্ব পাড় থেকে আরিচা-ঢাকা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ। মূল প্রস্তাবে তিনটি মিটারগেজ লাইন নির্মাণ করার জন্যই সুপারিশ করা হয়। ফলে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করে দেয় ঢাকা স্টেট রেলওয়ে। ১৮৮৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়। এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সেকশনের কাজ শুরু হয় ১৮৮৪ সালের শেষের দিকে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ কার্যক্রম সমাপ্ত হয় ১৮৮৪ সালে। সে বছরের শুরুতেই নারায়ণগঞ্জ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে (ট্রায়াল রান) প্রথম ট্রেন এল ঢাকায়। প্রথম যেদিন ধোঁয়া উগড়াতে উগড়াতে প্রচণ্ড গর্জনে ঢাকার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে যন্ত্রদানব এলো, কেমন ছিল সেই দিনটি? সেদিন কি দুর্গা-অপুরা একরাশ বিস্ময় আর কৌতূহল নিয়ে চেয়ে ছিল? খানিকটা ভয় মাখা চোখে নতুন যুগের এই বার্তাবাহককে দেখতে আসা উপচে পড়া লোকের ভিড়ে রেল স্টেশনের কার্যক্রম যে বিঘ্নিত হয়নি, একথা হলফ করে বলা যাবে না।
প্রথম দিনের সে ট্রেনে মোট যাত্রী সংখ্যা ছিল ২,১৭০ জন। প্রথম শ্রেণীতে ১৭ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৩২ জন ও বাকিরা ছিল তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রী। যদিও ট্রেনের আসন সংখ্যা ছিল এর অর্ধেকেরও কম। এই বিপুল পরিমাণ যাত্রী সংখ্যাই বলে দেয় রেল আগমন উপলক্ষে সেদিন ঢাকায় কেমন উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছিল।
তবে ঢাকায় সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয় ১৮৮৫ সালের ৪ জানুয়ারি। প্রথম ভাগে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা (ফুলবাড়িয়া) পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ছিল ১৪.৯৮ কিলোমিটার। ওদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সেকশনে নির্মাণ কার্যক্রম তখনও চলমান।
ঢাকা-ময়মনসিংহ সেকশনের নির্মাণ কার্যক্রম সমাপ্ত হয় ১৮৮৫ সালের মধ্যভাগে। সে বছর ১ আগস্ট থেকেই এ রুটে মালবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৮৮৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সেকশনটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ লাইন উদ্বোধন করেন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার অগাস্টাস রিভার্স থম্পসন। সেদিন প্রথম বৃহত্তর ময়মনসিংহবাসী ট্রেনে চড়ে ঢাকায় আসার সুবিধা পেল। নারায়ণগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৪ কিলোমিটার। নির্মাণে খরচ পড়েছিল ৭৬,৮৩,৭৩৩ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাইলে খরচ ৮৯,৭৪২ টাকা।
তিনটি প্রস্তাবনার মধ্যে দুটির নির্মাণকাজ তো সম্পন্ন হলো। কিন্তু ঢাকা-আরিচা রুটের কোনো অগ্রগতি নেই। একপর্যায়ে নানা জটিলতায় সেই লাইনের কাজ আর এগোল না। কারণ হিসেবে প্রকৌশলীরা জানালেন, এ রেলপথ নির্মাণ বেশ ব্যয়বহুল হবে। শুধুমাত্র ধলেশ্বরীর উপর সেতু নির্মাণ করতেই ১৮ লক্ষ টাকা খরচ হবে। তাছাড়া ততদিনে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ-গোয়ালন্দ হয়ে কলকাতা রুটটিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই কোম্পানি আর গাঁটের পয়সা খরচ করে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা-আরিচা রেলপথ নির্মাণের দিকে গেল না। সেই ব্রিটিশ শাসন গেল, পাকিস্তানি আমল গেল, সময় গড়িয়ে দেড় শতাব্দীর ইতিহাস রচিত হলো, কিন্তু আরিচাবাসী (মানিকগঞ্জ) আর রেলের দেখা পেল না।
১৮৯৪ সালে ময়মনসিংহ থেকে জামালপুরে রেলপথ নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ১৮৯৯ সালে জামালপুর থেকে তারাকান্দি হয়ে যমুনার পূর্ব পাড় জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত এ লাইন বর্ধিত করা হয়। ওপারে ছিল সিরাজগঞ্জ ঘাট। সেসময় যমুনায় রেলফেরি চলাচল করত। ১৯১২ সালে জামালপুরকে জংশন করে একটা লাইন নিয়ে যাওয়া হয় বাহাদুরাবাদ ঘাটে। এ রেলপথের পরিব্যাপ্তি হলো, শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাড় নারায়ণগঞ্জ ঘাট থেকে যমুনার পূর্ব পাড় বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত।
২০১২ সালে জগন্নাথগঞ্জ ঘাটকে বাইপাস করে তারাকান্দি থেকে একটা লাইন নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশন পর্যন্ত। ফলে জগন্নাথগঞ্জ ও বাহাদুরাবাদ ঘাট স্টেশন অকার্যকর হয়ে পড়ে। সে থেকে আর ঐতিহাসিক জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে ট্রেন যায় না।
লর্ড কার্জনের ঢাকা আগমণ
সেসময় ঢাকার প্রধান রেল স্টেশন ছিল ফুলবাড়িয়াতে। মাত্র তিনটি লাইন আর একটি স্টেশনঘর দিয়ে শুরু হয় আধুনিক ঢাকার রেলযাত্রা। তখন বুড়িগঙ্গার পাড় থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্তই ছিল ঢাকার বিস্তৃতি। কয়েক দশকের মধ্যে উত্তর দিকে ঢাকা শহরের পরিধি বাড়তে বাড়তে উত্তরা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
১৯০৪ সালে ট্রেনে চড়ে ভাইসরয় লর্ড কার্জন এবং লেডি কার্জন এসেছিলেন এই ফুলবাড়িয়া স্টেশনে। লর্ড কার্জনের আগমন উপলক্ষে সেদিন ঢাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফুলবাড়িয়া স্টেশনে উপচে পড়ছিল ভিড়। তৎকালীন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যান্ড্রু হেন্ডারসন লেথ ফ্রেজার নিজ হাতে ফুলের মালা পরিয়ে লর্ড কার্জনকে সংবর্ধনা জানান। এরপর লর্ড কার্জন ১৯০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি 'কার্জন হল' নামে একটি টাউনহলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে কার্জন হল ঢাকা কলেজ ভবন এবং ১৯২১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ভবন হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ঢাকা হয় পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী। শহরের আয়তন বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে ঘনবসতিও। তাই ছোট্ট এক স্টেশনঘর দ্বারা এ বিশাল জনসংখ্যার যাত্রীচাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ১৯৫০ সালেই রেল স্টেশন স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকার রেলপথ মানচিত্রেও কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়। নির্মাণ কার্যক্রম শেষ হলে ১৯৬৮ সালে ফুলবাড়িয়া থেকে কমলাপুরে ঢাকার রেলস্টেশন স্থানান্তর করা হয়। সেসময় কমলাপুরের ন্যায় আধুনিক রেলস্টেশন উপমহাদেশে খুব কমই ছিল।
ঢাকায় রেলওয়ের আগমনের প্রভাব ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। রেলপথ আসার ফলে ভারতবর্ষে ঢাকা বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গকে আলাদা করে ঢাকাকে করা হয় রাজধানী। এদিকে পাটশিল্পের জন্য নারায়ণগঞ্জ হয়ে ওঠে 'প্রাচ্যের ডাণ্ডি'। কয়েক দশকের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয় 'আদমজি পাটকল', যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাটকল ছিল। তাই রেলপথের আগমনই পিছিয়ে পড়া ঢাকাকে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে সহায়তা করেছিল, এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
এই সিরিজের পূর্ববর্তী অন্যান্য পর্বগুলো পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে:
১. ভারতবর্ষে রেলওয়ের আগমন-১ম পর্ব
২. প্রথম যেদিন রেল এলো বাংলায়-২য় পর্ব
৩. বিহার দুর্ভিক্ষ ও সাঁড়া-পার্বতীপুর-শিলিগুড়ি রেল সেকশন-৩য় পর্ব
৪. যশোর-খুলনায় রেল যুগের সূচনা এবং রূপসা-বাগেরহাট সেকশন
This is a Bengali article. It is the seventh part of the series 'History of Railway in Bangladesh'. Here is the description of the arrival of the railway in Dhaka
Necessary references have been hyperlinked inside the article.
Featured Image: thelibrary.org